সিলেটের ইসলামপুর এলাকায় প্রায় আট একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘কাজি ক্যাসল’। সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি হিসেবে সিলেটসহ সারা বাংলাদেশেই আলোচনায় রয়েছে এই বাড়িটি। সিলেটের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন আল হারামাইন গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান।
প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমির্ত এই প্রাসাদসম বাড়িটির নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ সবাই। এই বাড়িটিতে হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, স্টিমবাথ, লিফটসহ আধুনিক স্নানাগার রয়েছে। ২৯টি মাস্টার বেডের ডিজাইন করা হয়েছে ২৯টি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে। চার দেশের প্রকৌশলীর নির্মাণশৈলীতে প্রায় আড়াইশ নির্মাণ শ্রমিকের আট বছরের পরিশ্রমে বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। এই বিলাসবহুল বাড়িটিতে কৌতূহলে এক সময় ভিড় জমাতেন সিলেটের অনেকেই। তবে এখন নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না
প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে গোটা বাংলাদেশেই সিলেটের নামডাক রয়েছে। এই প্রবাসীরা বছরে এক-দুইবার সিলেটে আসেন। নিজেদের থাকার জন্য তৈরি করেন বিলাসবহুল বাড়ি। শুধু শহরতলীতেই নয় সিলেটের গ্রামে গ্রামেও রয়েছে প্রাসাদসম বাড়ি। এসব আধুনিক অট্টালিকা আগেরকার রাজপ্রাসাদকেও হার মানাবে। এসবের মালিক সবাই থাকেন প্রবাসে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়িগুলোতে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
বাড়িগুলোর প্রবেশমুখে রয়েছে কারুকার্যময় ফটক, চারদিকে টাইলস ও মার্বেলসহ সীমানা প্রাচীর। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে পুরো বাড়ি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা, রয়েছে প্রতিটি কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। সিলেটে নির্মিত এসব বিলাসবহুল বাড়িগুলোর বেশিরভাগই নির্মিত হয়েছে আট একর থেকে ১৫ একর জায়গাজুড়ে।
সিলেটের এ যাবতকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি কাজি ক্যাসলের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিলাসবহুল এই বাড়িটিতে বর্তমানে আল হারামাইন গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের ভাই বসবাস করেন। এছাড়া পুরো বাড়িটি দেখভালের জন্য মোট ১৭ জন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন। এমনকি পুরো বাড়ির নিরাপত্তায় পাঁচজনেরও বেশি নিরাপত্তা প্রহরী কাজ করে যাচ্ছেন। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের জন্যও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। বাড়িটি নির্মাণের শুরুতে মানুষের মধ্যে কৌতূহল থাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হত। বর্তমানে নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি কোনো ধরণের ছবিও তুলতে দেওয়া হয় না।
এমন বিলাসবহুল বাড়ি শুধু সিলেট শহর ও শহরতলীতেই রয়েছে এমনটা নয়। সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানী নগর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারেও রয়েছে এমন বিলাসবহুল বাড়ি। এসব বাড়ির মধ্যে অনেক বাড়িই রয়েছে যেগুলো নির্মিত হয়েছে লন্ডনের অনেক বাড়ির আদলে। ওই এলাকাগুলোর বাড়ি নির্মাণেও খরচ হয়েছে কোটি টাকার ওপরে। এসব বাড়ির বেশিরভাগই বাইরে থেকে যাতে দেখতে না পাওয়া যায় সেজন্য প্রবেশমুখেই লাগানো রয়েছে লোহার বিশাল বড় গেট।
সিলেটের ওসমানীনগরের বিলাসবহুল বাড়ি শান্তিনীড়। আভিজাত্য, নান্দনিকতা আর আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িটি। বিলাসবহুল দৃষ্টিনন্দন বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। শুধু নামেই শান্তিনীড় এমনটা নয়। দুই তলা এই বাড়িটির নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মন কাড়বে যে কারও। বাড়িটি দেখতে প্রায়ই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এই বাড়িটির মালিক লন্ডন প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুর রব মল্লিক। এই বাড়িটিতে রয়েছে ২০টি কক্ষ ও দেশি-বিদেশি কাঠের কারুকাজ। বাড়িটির ভেতরেও রয়েছে সুইমিংপুলের সুবিধা। এছাড়াও ভেতরে রয়েছে গাছ দিয়ে ঘেরা পিচঢালা সড়ক।
বাড়িটির মালিক মোহাম্মদ আব্দুর রব মল্লিক বলেন, রাতে যখন বাড়ির বাগানে বেড়াই তখন আলাদা একটা প্রশান্তি আমার ভেতরে কাজ করে। বাড়িটি আমি লোক দেখানোর জন্য করিনি, সকলকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার জন্যই করেছি। আমার বাড়ির বাগানটিতে রয়েছে, ওষুধি, ফলজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এই বাড়িটিতে পুকুরের পাশে রয়েছ বিশাল একটি লেক। সেখানে বিকেলে বসে সময় কাটালে মানসিক একটি প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর লেকে যাওয়ার জন্যও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি সেতু।
তবে পুরো সিলেটজুড়ে এমন বিলাসবহুল বাড়ির নির্দিষ্ট সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই কোথাও। এছাড়া এসব বাড়ি দখলের প্রবণতাও রয়েছে। বাড়ি দখল ঠেকাতে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের রয়েছে পৃথক প্রবাসী কল্যাণ সেল। এসব সেলে প্রবাসীরা অভিযোগ দিলে পুলিশ দ্রুতই ব্যবস্থা নেয় বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, সিলেটে বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ না থাকায় প্রবাসীদের বেশিরভাগ আয়ের অর্থই ব্যাংকে পড়ে থাকে। সেজন্য নানা সময় প্রবাসীরা এমন টাকায় দামি বাড়ি বানাচ্ছেন। এতে সিলেটের সঙ্গে দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এসব টাকা বিনিয়োগ হলে একদিকে টাকা যেমন কাজে লাগতো, তেমনি কর্মসংস্থানের জায়গাও হতো মানুষের। সেজন্য সরকারকে দ্রুতই সিলেট অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ করতে হবে। তবে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে অনেক প্রবাসী বিনিয়োগ করছেন, এটি সিলেটের জন্য আশার খবর।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) লুৎফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাসীদের এসব বিলাসবহুল বাড়ি অনেক সময় কেয়ারটেকার বা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দখলের চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটি প্রবাসী কল্যাণ সেল রয়েছে। অভিযোগ পেলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি আসলে আমাদের সিলেটের জন্য বিশাল একটি সমস্যা। এর জন্য আমরা সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। প্রবাসীরা এসব বাড়িতে থাকেন না, তাদের মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। অনেক সময় এগুলো দখলের একটি পাঁয়তারা থাকে।
দেখা যায় অনেকদিন যাবত বাড়িগুলো খালি পড়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ সেল গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা অল্প সময়ের জন্য আসেন, আবার চলে যান তাদের জন্য ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম রয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে এই টিম শুরুতে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করে। সেটি সম্ভব না হলে পরবর্তীতে আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সুত্র: ঢাকা পোষ্ট
পাঠকের মতামত